• শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বরুড়ায় মোবাইল কোর্টে ১১ হাজার টাকা জরিমানা বরুড়ায় পবিত্র ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সঃ) উদযাপিত বরুড়া বড় লক্ষীপুর ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) জশনে জুলুছ পালিত বরুড়ায় পুরনো মুক্তিযোদ্ধা অফিস সংলগ্ন জনসাধারণের চলাচলের রাস্তার উপর গাছ থাকায় জনদূর্ভোগ গনতন্ত্র সুশাসন ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ধানের শীষে ভোট দিন …….. আবুল কালাম বরুড়ায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, গ্রাম আদালত ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত বরুড়ায় শিলমুড়ি রাজ রাজেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে ফুটবল ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত বরুড়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ বরুড়ায় হাজার পিস ইয়াবাসহ মাদক কারবারী আটক বরুড়ায় জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা এবং পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

“তাইফুর রহমান ছোটন ইতালীয় গণমাধ্যমে ‘বাংলাদেশ বিরোধী’ বক্তব্য রাখেননি”

Dev Farhad / ১১২৬ Time View
Update : বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০

Warning: Attempt to read property "post_excerpt" on null in /home/u403222581/domains/newsallbangladesh24.com/public_html/wp-content/themes/amarshomoy/single.php on line 110

 

মাঈনুল ইসলাম নাসিম : ব্যক্তিগত ভাবে শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান ছোটনকে খুব কাছ থেকে আমি চিনি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি হতে ইতালিতে আমার স্থায়ী বসবাসের সুবাদে। কল্যাণমূলক বহু কাজ একসাথে করেছি আমরা। করোনা মহামারির ভয়ংকর ক্রান্তিকালে অতি সম্প্রতি ইতালিয়ান গণমাধ্যমে তাঁর দেয়া ‘যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত’ বক্তব্যকে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভিন্ন আঙ্গিকে নেতিবাচক উপস্থাপন করানোর প্রেক্ষিতে মূল সত্যটি তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করছি বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে।

ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিলানের কনস্যুলেট জেনারেলের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিরীহ প্রবাসীদের সাম্প্রতিক গণবিস্ফোরণ থেকে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতেই ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের তাইফুর রহমান ছোটনকে ‘দেশ বিরোধী’ ‘রাষ্ট্র বিরোধী’ ‘দেশদ্রোহী’ এই টাইপের সস্তা তকমা দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে পাসপোর্ট সিন্ডিকেটের রমরমা বাণিজ্যে ডুবে থেকে ইতালিস্থ কুখ্যাত দালাল সিন্ডিকেট।

তাইফুর রহমান ছোটন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ থেকে যোযন যোযন দূরত্বে আমার অবস্থান। মূল কথা হচ্ছে, প্রবাসে কী বিএনপি কী আওয়ামী লীগ কী জাতীয় পার্টি কী জামায়াত তথা বাংলাদেশ ভিত্তিক যে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ঘোর বিরোধী আমি। ইতালির রাষ্ট্রীয় আইনে এদেশের ভৌগলিক সীমারেখার অভ্যন্তরে ভিনদেশি রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম বৈধতা নেই। শতভাগ অবৈধ এই ইস্যু নিয়ে লিখবো অন্য সময়। মূল প্রসঙ্গেই থাকবো আজ।

ইতালিতে গত ৩ দশকে অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলন সংগ্রামে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে মরহুম খান লুতফুর রহমান, গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, নূরে আলম সিদ্দিকী বাচ্চু, কে এম লোকমান হোসেন প্রমুখের সাথে তাইফুর রহমান ছোটনের নামও সমান মর্যাদায় সোনার হরফে লিপিবদ্ধ থাকবে বছরের পর বছর। রাজপথে ইমিগ্রেশন আন্দোলনে তাঁদের অবদানের রাজস্বাক্ষী আমি নিজেই। তাঁরা সবাই দেশপ্রেমিক, পোড় খাওয়া সৈনিক। বাংলাদেশের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এক অর্থে বাংলাদেশকেই অস্বীকার করার সমতূল্য।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস এবং মিলানের কনস্যুলেট জেনারেলের নেক্কারজনক দায়িত্বহীনতা এবং চরম উদাসীনতার খেসারতে মহামারির শুরুতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ইতালির বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ফ্লাইট বোঝাই করে আমাদের হাজার হাজার দেশি ভাই-বোনেরা বানের স্রোতের মতো বাংলাদেশে গিয়ে ‘ভাইরাস বিস্ফোরণ’ ঘটায়। দূতাবাস ও কনস্যুলেট ঘুমিয়ে না থাকলে অন্তত দুই সপ্তাহ আগে ঢাকার উদ্দেশ্যে ইতালি থেকে ফ্লাইট বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি চিত্র অন্যরকম হতো, এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নেই।

ইতালিতে ৩৫ হাজারের বেশি লোক অদৃশ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে হার মানার পর জুন মাসে যখন মহামারির প্রকোপ কেটে গিয়েছিলো, ঠিক তখন রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিলানের কনস্যুলেট জেনারেলের নতুন করে দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৬টি চার্টার্ড ফ্লাইটে কয়েকশ’ করোনা রোগী ঢাকা থেকে নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে রোমে এসে জেনুইন টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়ার পর ঘুম হারাম হয়ে যায় ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। আত্মরক্ষায় শুরু হয় একশান, সেকেন্ড ওয়েভ ঠেকাতে।

বিমানের সর্বশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে ৬ জুলাই আসা যাত্রীদের কোভিড-১৯ টেস্ট করাতে রোমের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি বিমানবন্দরের ৫ নাম্বার টার্মিনালকে ফিল্ড হসপিটালে রূপ দেয় ইতালীয় প্রশাসন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পজিটিভ ধরা পড়া রোগীরা এবং ঢালাওভাবে রোগের লক্ষ্মণ নিয়ে ঢাকা আসা যাত্রীরা বিমানবন্দরে ইতালীয় গোয়ান্দা বিভাগের একাধিক ইউনিটের কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের সার্বিক করোনা পরিস্থিতির আদ্যোপান্ত তুলে ধরে। ইতালির অধিকাংশ জাতীয় দৈনিক ও টিভি তখন ঢাকা থেকে আসা বিমানের ফ্লাইটকে ‘ভাইরাস বোমা বহনকারী’ হিসেবে সংবাদ প্রকাশ করে।

ছয় কোটি জনসংখ্যার দেশ ইতালির সাধারণ জনগণের তীব্র ক্ষোভের মুখে ৭ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে ফ্লাই করার ক্ষেত্রে ৭ দিনের সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখনও ইতালির তেমন কোন গণমাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা তাইফুর রহমান ছোটনের বক্তব্য ভাইরাল হয়নি। পরদিন ৮ জুলাই কাতার এয়ারওয়েজের দু’টি ভিন্ন ফ্লাইট ইতালীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ঢাকার দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে রোম ও মিলান বিমানবন্দরে অবতরণ করলে রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগ করে বাংলাদেশি নাগরিকদের সসম্মানে ফেরত পাঠায় ইতালি।

দুই দিন আগে বিমানের চার্টার্ড ফ্লাইটে আসা করোনা রোগীরা ঢাকা থেকে নিয়ে আসা করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট একের পর এক ইতালীয় প্রশাসনের কাছে প্রদর্শন করায় এবং বিভিন্ন সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখে ভূয়া টেস্ট এবং জাল সনদের বিষয়টি স্বীকার করে নিতে বাধ্য হলে প্রশাসন আরও নড়েচড়ে বসে। ইতালীয় গণমাধ্যম ঢাকাস্থ তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্ক থেকে ক্রসচেক করে পুরোপুরি নিশ্চিত হয় সার্টিফিকেট বাণিজ্যের বিষয়াদি। ইতালীয় একাধিক পত্রপত্রিকা ও নিউজ পোর্টালের সাথে তাইফুর রহমান ছোটনের বহু বছরের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে তাঁর বক্তব্যও গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়।

ইতাল-বাংলা এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তাইফুর রহমান ছোটন রোম ও মিলান বিমানবন্দর থেকে দেড় শতাধিক নিরীহ প্রবাসীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবার প্রতিবাদ করতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি অনিয়ম অব্যবস্থাপনা এবং অরাজকতাকে জাহান্নামের (ইনফেরনো) সাথে তুলনা করে বলেন, ইতালিতে চিকিৎসা নেবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাঁদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হয়নি। ইতালীয় বিশেষ এজেন্সির সাথে কাজের সুবাদে দায়িত্ব নিয়ে আমি বলছি, তাইফুর রহমান ছোটন কখনোই আপনার আমার প্রিয় মাতৃভূমিকে ‘জাহান্নাম’ আখ্যা দেননি কিংবা বাংলাদেশকে দোজখের সাথে তুলনা করেননি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, ইতালিয়ান গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখার সময় বাংলাদেশ কমিউনিটির ‘অঘোষিত মুখপাত্র’ তাইফুর রহমান ছোটন আরও সতর্ক হতে পারতেন। মহামারির চলমান ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে যে ১০ হাজার বাংলাদেশি ঢাকা থেকে ফ্লাই করার অপেক্ষায় থাকার কথা তিনি বলেছেন, এই সংখ্যাটি ইতালির ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তার অর্ধেক বা কিছু বেশি। সমগ্র ইউরোপ প্রবাসী যাঁরা বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন তাদের সংখ্যা ১০ হাজারের চাইতে অবশ্যই বেশি। মোদ্দা কথা হচ্ছে, তাইফুর রহমান ছোটন ইতালীয় গণমাধ্যমে ফেব্রিকেটেড এমন কিছু বলেননি যাতে বাংলাদেশের ইজ্জত সম্ভ্রম নতুন করে বিনষ্ট হয়েছে।

ইতালিতে বিগত দিনে বহু বাংলাদেশি বৈধতার সুযোগ পেয়েছেন তাইফুর রহমান ছোটনের অবদানে। ভালো ভাষা জানার পাশাপাশি আইনকানুন বোঝেন বিধায় ইতালিয়ান প্রশাসন এবং গণমাধ্যম তাঁকে সমীহ করে এটাও সত্য। দাড়ি-টুপি দেখে কিংবা রাজনৈতিক আদর্শ বিবেচনায় এদেশের প্রশাসন কাউকে জাজমেন্ট করে না বা করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ভিত্তিক ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের কারণে একজন কমিউনিটি ব্যক্তিত্বকে প্রতিহিংসার ‘বলির পাঠা’ বানাবার ঘৃন্য অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানানো হচ্ছে ইতালি জুড়ে। দূতাবাস ও কনস্যুলেটের অপরিপক্কতার কারণেই বাংলাদেশিরা আজ ইতালিতে ‘ভাইরাস বোমা’, এটাও এখন ওপেন সিক্রেট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর