একজন-দুজন নয়, গান্ধী পরিবারের তিন সদস্য এবার লোকসভায় জায়গা পেতে যাচ্ছেন। সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী এরই মধ্যে লোকসভায় তাদের সিট নিশ্চিত করেছেন। রাহুল তো প্রথমবারের মতো লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতার সাংবিধানিক পদ পেয়ে গেছেন।
রাহুলের ছেড়ে দেওয়া ওয়েনাড আসন থেকে উপনির্বাচন করবেন তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র। জিতে গেলে ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একই পরিবারের তিন সদস্যকে একসঙ্গে লোকসভায় দেখা যাবে।
ভারতের রাজনীতিতে একটা বড় অংশজুড়ে পরিবারতন্ত্র রয়েছে। উত্তর প্রদেশ এবং বিহারের যাদব পরিবার, কাশ্মীরের আবদুল্লাহ পরিবার, তামিলনাড়ুর করুনানিধি পরিবার এবং মহারাষ্ট্রের পাওয়ার পরিবারের সদস্যদের এর আগে সংসদে দেখা গেছে। কিন্তু তাই বলে একই পরিবারের তিন সদস্য, সেটাও আবার মা এবং ছেলে, মেয়ে! না, পরিবারতন্ত্রের এমন প্রদর্শনী এর আগে দেখা যায়নি।
রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের বাবা রাজীব গান্ধীর আত্মজীবনী লিখেছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক মিনহাজ মার্চেন্ট। টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় এক কলামে তিনি লিখেছেন, রাজীব গান্ধী বেঁচে থাকলে এমন ঘটনা তিনি নিজেও বিস্মিত হতেন।
গান্ধী পরিবারের মধ্যে একমাত্র রাজীব গান্ধীই রাজনীতির বাইরে কিছু করেছেন। রাজনীতিতে আসার আগে দীর্ঘসময় বৈমানিক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে এক বিমান দুর্ঘটনায় ভাই সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর পর মা ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে তাকেও মুক্ত আকাশ ছেড়ে রাজনীতির খানাখন্দে ভরা সড়কে নামতে হয়।
তবে বেঁচে থাকা অবস্থায় স্ত্রী সোনিয়াকে রাজনীতিতে আনেননি রাজীব। তাকে সরকারের কোনো পদে বসাননি। তবে পরিবর্তিত সময়ে যে তার পুরো পরিবারই লোকসভায় ঠাঁই করে নেনে, সেটা হয়ত রাজীবের ভাবনাতেও ছিল না।
সোনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কা–এই তিন গান্ধীর কেউই কখনো কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন না, কেন্দ্রীয় কোনো মন্ত্রিসভাতেও তাদের কখনো দেখা যায়নি। এককথায় দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রে অবস্থান করলেও কখনো কোনো সাংবিধানিক পদে বসেননি তাদের কেউ।
তবে এবার সেই চিত্র বদলাচ্ছে। রাহুল বিরোধীদলীয় নেতা বনে গেছেন। শুধু নিজের দল কংগ্রেসকেই নয়, লোকসভায় এখন তৃণমূল কংগ্রেসসহ ইন্ডিয়া ব্লকসহ লোকসভার সব বিরোধীদলের নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
এতদিন কোনো সাংবিধানিক পদ না থাকায় লোকসভায় খুল্লাম খুল্লা কথা বলেছেন রাহুল। কখনো মোদি, কখনো গোটা বিজেপি আবার কখনো আদানি, আম্বানির মতো ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আক্রমণাত্মক শব্দ প্রয়োগ করেছেন। এখন অন্যতম সংসদ নেতার ভূমিকায় কিছুটা রয়েসয়ে পথ চলতে হবে তাকে।
এছাড়াও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রাষ্ট্রের নির্বাচন কমিশনার, ভিজিল্যান্স কমিশনার, লোকপাল এবং সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (সিবিআই) পরিচালক মনোনয়নের ক্ষেত্রেও মোদির সঙ্গে প্যানেল সদস্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন রাহুল।
দীর্ঘসময় ধরে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকলেও আসলে রাজনীতিক হিসেবে কতটা পরিপক্ব হয়েছেন রাহুল, সে সম্পর্কে এবার পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সঙ্গে পুরো পরিবার নিয়ে লোকসভায় থাকার বাড়তি চ্যালেঞ্জ তো আছেই।